ইবন সিনার মূল
ইন্টারেস্ট ছিল ফিলোসফিতে, তবে বেশি বিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য। তিনি বলেন, সাবজেক্ট
হিসেবে মেডিসিন চয়েস এজন্য করেছিলেন যে, চিকিৎসা বিজ্ঞান তার কাছে অন্যান্য বিষয় থেকে
অধিক সহজ লেগেছিল![i]
তার বই কানুন ফি আল-তিব্ব ৮০০ বছর ধরে সারা
পৃথিবীর মেডিকাল টেক্সটবুক ছিল[ii], যা প্রায় এক অলৌকিক ঘটনা।তার
ব্যাপারে এম. গুলাম মুয়াযযাম বলেন, “It is difficult to write about Ibn Sina
except in superlatives”।[iii]
কিন্তু এখানে
দর্শন নিয়েও কথা হবে না, মেডিসিন নিয়েও কথা হবে না। আলোচনা হবে ইবন সিনার ভূবিজ্ঞান
নিয়ে।
খুব স্বাভাবিক
ভাবেই একজন মাটিতে ঘুষি মেরে বলতে পারেন, ফিলসফি আর মেডিসিন – দুইটা আলাদা আলাদা ভাবে
একজন মানুষকে চিরস্মরণীয় রাখার জন্য যথেষ্ট। এরপর আবার আর্থ সায়েন্স করার মানেটা কি?
কামড়ায় ইবন সিনারে?
ইবন সিনা তার
আল-শিফা গ্রন্থে আর্থ সায়েন্স নিয়ে লেখেন।
অবশ্য নাম শুনলে যে কেউ ভাববে – এটা মেডিসিন নিয়ে লেখা বই। মেডিসিন বটে, তবে অজ্ঞতার
মেডিসিন। ইবন সিনার উদ্দেশ্য ছিল এই ধরাকে
অজ্ঞতা হতে মুক্ত করতে, তার এই বইটির মাধ্যমে। বইটিতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন সাবজেক্টের
অনেক চমৎকার কথাবার্তা লিখেছেন তিনি। ফিলসফি আর মেডিসিন – উভয় সাবজেক্টে তিনি আলাদা
আলাদা ভাবে চিরস্মরণীয়। কিন্তু কেবল দুই সাবজেক্ট কাঁপানো পলিম্যাথদের স্টাইল না।
এবার জেমস হাটনে
আসা যাক। জেমস হাটন ১৮শ শতকের বিজ্ঞানী। ১৮শ শতকের ইউরোপের সায়েন্সের উপর ইসলামী বিজ্ঞানের
প্রভাব নিয়ে বই-পেপার প্রায় শুন্যের কোঠায়। তাই এ নিয়ে কাজ দেখলে চমকে উঠি। এই সময়ের
বিজ্ঞানীদের উপর ইসলামী প্রভাব অবশ্যই পড়েছে,[iv] তবে সে নিয়ে কাজ হয় নি। কাজ
নাই মানে এমন না যে প্রভাবও নাই। ১২শ শতক পর্যন্ত মোটামোটি একরকম স্টাডি হয়েছে, ১২শ
থেকে ১৬শ শতক কোনোমতে স্টাডি হয়েছে এবং এরপর তেমন কিছুই হয় নাই।[v]
হাটনকে অনেকে
আধুনিক জিওলজির জনক বলেন। সত্যি, জিওলজিতে তিনি ভালো কাজ করেছেন। কিন্তু কোন কারণে
বিজ্ঞানের ঐতিহাসিকরে তারে নামের পাশে ইবন সিনার নাম লেখতে ভুলে যান।
তার দুটি আইডিয়া
নিম্নে উল্লেখিত হল। এ দুটিই আধুনিক জিওলজির জন্মদানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ইবন
সিনা থেকে নেওয়া[vi];
·
পৃথিবীর
গঠন স্থির নয়। এটি পাল্টায়। পরিবর্তন হয় - ক্ষয়, পলি জমা হওয়ার মত ঘটনা ঘটার কারণে।
যা থেকে বোঝা যায় যে পৃথিবী অত্যন্ত পুরাতন। এটা পরবর্তীতে জিওলজিতে deep time এর ধারণার
প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করে।
·
uniformitarianism
এর ধারণা। এই ধারণা থেকে জানা যায় যে পৃথিবীর তল হঠাৎ কোন আকস্মিক ঘটনা দ্বারা নিখুঁত
হয়ে যায় নি বরং ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনার ফলে বর্তমান অবস্থায় এসেছে। এটা
ভূবিজ্ঞানের একদম মৌলিক এক প্রিন্সিপল।
ইবন সিনা তার
কিতাব আল-শিফা এর মধ্যে আরও অনেক আইডিয়ার
কথা উল্লেখ করেন যা সামগ্রিক ভাবে জেমস হাটনের চিন্তাধারায় দেখা যায়। এখন, জেমস হাটন
যে তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন, তা ছিল ইউরোপে একেবারে নতুন, যার জন্য হাটনকে সমালোচনার শিকার
হতে হয়। এটি একেবারেই ইউরোপের বৈজ্ঞানিক ট্র্যাডিশনের বাইরের ছিল, এমনকি গ্রীক ট্র্যাডিশনেও
এমন কোন কাজ পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, জেমস হাটন তার নিজ জাতির ইতিহাস থেকে আইডিয়া পান
নি; তিনি এটি পেয়েছেন ইবন সিনার অরিজিনাল থিঙ্কিং থেকে। তিনি লাইডেন আর প্যারিসে স্টাডি
করেছেন। যেখানে ইবন সিনার কিতাব আল-শিফা
এর মিটিওরোলজি ও মিনারোলজির অংশ বিদ্যমান ছিল।[vii] ২০১৪ সালে হোসেইনজাদাহ ও গাসেমনিজাদ
এটা প্রমাণ করেন যে জেমস হাটন, ইবন সিনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।[viii]
[i] John Freely, Light from the East: How the Science of Medieval Islam Helped to Shape
the Western World (I. B. Tauris, 2011) p. 70
[ii] Hank Green, “Ancient & Medieval
Medicine - Crash Course History of Science #9” online video, crashcourse.com.
[iii]M Shamsher Ali (edt), Muslim Contribution to Science and
Technology (2nd, Dhaka:
Islamic Foundation Bangladesh, 2012)
[iv] প্রভাবের উদাহরণের জন্য দেখতে পারেন - আরমান
ফিরমান. স্যার আইজ্যাক নিউটনের উপর মুসলিম প্রভাবঃ https://armanfirman.blogspot.com/2020/03/blog-post.html
[v] George
Saliba, Islamic
Science and the Making of European Renaissance (The MIT Press, 2007) ch. 7.
[vi] Munim M. al-Rawi. “The Contribution
of ibn Sina (Avicenna) to the Development of Earth Sciences” muslimheritage.com.
[vii] R.
Potter, The Making of Geology: Earth
Science in Britain 1660-1815. (Cambridge University Press, 1977) p: 288 as cited in Munim M. al-Rawi op. cit.
[viii]
S. R. Hoseinzadeh, M. Ghasemnezhad, ibn
Sina and Uniformitarianism, Geography
and Environmental Planning Journal, 25th Year, Vol. 55, No. 3,
Autumn 2014. as cited in Salim
T. S. al-Hassani (edt), 1001 Inventions:
The Enduring Legacy of Muslim Civilization (4th
Edition, e-book, 2017)
0 Comments