“১৭শ শতক আসতে আসতে ইউরোপ ইসলামের প্রতি তার ঋণকে ভুলে গিয়েছিল। যদিও নিউটন বলেছিলেন যে, তিনি তার পূর্বসূরিদের চেয়ে অধিক দূরত্বে দেখতে পেরেছেন কেবল ‘দানবদের কাধের উপর দাঁড়ানোর মাধ্যমে’, তিনি ক্রেডিট দিয়েছিলেন শুধুমাত্র ইউরোপিয়ান ও প্রাচীন গ্রীক চিন্তাবিদদের। তিনি মধ্যযুগের অ্যারাবিক স্কলারদের কোন নামই নিলেন না, যাদের থেকে ইউরোপ প্রথম বিজ্ঞান শিখেছিল”
-
- --------জন
ফ্রীলি[১৩]
বিজ্ঞানের ইতিহাস
অনেক ডিপ। অনেক জটিল। স্বাভাবিক ভাবে এক অন্ধকার যুগের কথা জানানো হয় আমাদের, মাঝে
দিয়ে ১৭০০ বছর ফাকা! যেন মানুষের মস্তিষ্ক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এই সময়কালে। এক ইউরোসেন্ট্রিক
ইন্টেলেকচুয়াল হিস্ট্রি, যেন ইউরোপিয়ানদের ছাড়া অন্য কোন জাতি জ্ঞানগত নতুনত্বের ধারা
বাহিত করতে পারে না। কিন্তু কেন যেন নন-ইউরোপিয়ান আমাদের এই দেশেও ইউরোসেন্ট্রিক ইতিহাস
খাওয়ানো হয় স্টুডেন্টদের।[১৫] যাইহোক, মানুষের সৃজনশীল চিন্তা আসলে কোনওসময় বন্ধ হয়
না। ১৭০০ বছর ধরে বিজ্ঞান হয়েছে আর জটিল ধরণের বিজ্ঞান হয়েছে। বর্তমানে অনেকে মধ্যযুগ
শুনলেই নাক সিটকিয়ে উঠেন। অথচ মধ্যযুগের বিজ্ঞান
অত্যন্ত সমৃদ্ধ। চাইনিজ, হিন্দু, ইসলামী তিন জাতিতেই অবোধগম্য মস্তিষ্ক তৈরি হয়েছিল,
তবে ইসলামী বিজ্ঞান বাই ফার সবচেয়ে
বেশি প্রভাবশালী।[১৬]
এখানে আলোচ্য স্যার
আইজ্যাক নিউটন এর উপর তিন জাতির প্রভাবই সাজেস্টেড। তবে চাইনিজ প্রভাব পরোক্ষ এবং এক্ষেত্রে
ট্র্যান্সমিশন রুটও পাওয়া দুষ্কর।[১৭] হিন্দু প্রভাব কেবল ক্যালকুলাসের ক্ষেত্রে আছে
আপাতত পাওয়া তথ্যে। কিন্তু একাধিক ক্ষেত্রে ইসলামী প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়।
ইউরসেন্ট্রিক
হিস্ট্রি অফ সায়েন্সের সুবাদে নিউটনের পূর্বসূরিদের কথা বলতে গেলে বেশিরভাগ
ক্ষেত্রে কেবল Copernicus, Kepler, Descartes, Tycho Brahe আর Galileoদের ধরা হয়। ‘শুধুমাত্র এদের থেকে নিউটন সরাসরি
অনুপ্রাণিত’।
আমরা
প্রায় সকলেই নিউটনের একটি পরীক্ষণের সাথে পরিচিত, যেখানে তাকে দেখা যায় আলো নিয়ে
পরিক্ষা করতে। কিন্তু আমরা বেশিরভাগই এটা জানিনা যে এই একই এক্সপেরিমেন্ট তার শত
শত বছর আগে ইবন আল-হাইসাম (Alhazen) করে গিয়েছেন।[১]
একটি
জিনিস অবশ্য লক্ষণীয়, সরাসরি প্রভাবে যাওয়ার আগে। মুসলিম বিজ্ঞানীদের করে যাওয়া অনেকগুলো
কাজের সাথে স্যার আইজ্যাক নিউটনের কাজের মিল পাওয়া যায়। ক্যালকুলাস নিয়ে
অন্যান্যদের সাথে ইবন আল-হায়সাম ও সাবিত বিন কুররা লেখেছিলেন।[১১] গ্র্যাভিটি
সম্বন্ধেও ইবন আল-হায়সাম লেখে গিয়েছেন।[১২] নিউটনের শত শত বছর আগে আবু বকর আল-রাযী
পরম ও আপেক্ষিক মহাশুন্যের মাঝে পার্থক্য নিরূপণ করেন।[৬] আর ইবন সিনা, বেগের সাথে
ভরের সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন, যা ভরবেগের একটি পূর্বরূপ।[৭] এটিও নিউটনের
সাথে সম্পর্কিত এবং এই লিস্ট আরও লম্বা করা যায়।
আসুন
নিউটনের গতির তিন সূত্রের দিকে তাকাই। অন্যান্যদের সাথে ইবন সিনা আর ইবন আল-হায়সাম
কে দেখা যায় জড়তার সূত্রের (প্রথম সূত্র) ব্যাপারে লিখতে।[৮] আবুল বারাকাত
আল-বাগদাদী লেখেন, বল, তরণের সমানুপাতিক। যা আমরা জানতে পারি ২য় সুত্র থেকে।[৯] আর
ইবন বাজ্জা লিখেন, প্রত্যেক ক্রিয়ার জন্য একটি বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ৩য়
সূত্র।[১০]
স্যার
আইজ্যাক নিউটন মুসলিমদের থেকে আদৌ অনুপ্রাণিত কি? খুব সম্ভবত।
তার
লেখার মধ্যে ইবন তুফাইলের ছাপ অত্যন্ত স্পষ্ট।[২] তাছাড়া আরও অনেক ইউরোপিয়ান
বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও সাহিত্যিকদের মদ্যে ইবন তুফাইলের প্রভাব পরিলক্ষিত। ইবন
তুফাইলের হাই ইবন ইয়াকযান ওই সময়
ইংল্যান্ডে বেস্টসেলার ছিল।[১৮]
তিনি
নিজের পারসোনাল লাইব্রেরীতে ইবন আল-হাইসামের সেরা কাজ কিতাব আল-মানাযির এর একটি কপি রেখেছিলেন।[৩] বিজ্ঞানের ইতিহাস –
সাবজেক্টের জনকও পরোক্ষভাবে নিউটনের উপর ইবন আল-হাইসামের প্রভাবের কথা উল্লেখ
করেন।[৪]
অনেকে
অ্যালকেমিকে অপবিজ্ঞান বলে জাবির ইবন হাইয়ান কে নিয়ে হাসাহাসি করেন। অ্যালকেমি অপবিজ্ঞান
হতে পারে, কিন্তু জাবির ইবন হাইয়ান এর অ্যালকেমি এক্সপেরিমেন্টাল ছিল এবং তিনি
নিজেই তাদের তিরস্কার করেছেন যারা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অ্যালকেমি প্র্যাকটিস করত
না। যাহোক, এসব ঠাট্টাবাজ এতটাই মূর্খ যে তারা এটা জানে না যে স্যার আইজ্যাক
নিউটনও একজন অ্যালকেমিস্ট ছিলেন। শুধু অ্যালকেমিস্ট না অবশ্য, জাবিরিয়ান
অ্যালকেমিস্ট। তিনি জাবির ইবন হাইয়ান এর বই পড়ে অনুপ্রাণিত হন এবং সে থেকেই
অ্যালকেমি প্র্যাকটিস করেন।[৫] তথ্যটি বের করেছেন প্রফেসর নিউম্যান। তিনি বলেন, Summa Perfectionis
নামের একটি বই ছিল যা মূলত জাবির ইবন হাইয়ান এর নামে থাকা বই
কিতাব আল-মুল্ক এর উপর ভিত্তি করা। এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন রিচার্ড রাসেল
এবং এর তিনটি ভিন্ন সংস্করণ বের হয়। তার মধ্যে একটি উইলিয়াম স্টারকির Secrets
Reveal’d, যা নিউটনের কাছে ছিল।
তো,
সম্ভবত নিউটনের আইডিয়াগুলো আপেল থেকে বের হয় নি...
“আগের
বিজ্ঞানীদের থেকে বর্তমানের বিজ্ঞানীরা সেরা না...মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, ফিডিয়াস এর
কাধের উপর দাড়িয়ে, কিন্তু এটি তাকে আরও লম্বা বানায় না। নিউটন, গ্যালিলিওর কাঁধের
উপর দাড়িয়ে, এর জন্যই বরং সে বহুদূর দেখতে পেরেছে...”[১৪]
-
George
Sarton, father of ‘History of Science’
স
References:
২। Samar
Attar. The Vital Roots of European Enlightenment: Ibn Tufayl's Influence on
Modern Western Thought. (Lexington Books, 2010)
৩।
Salim T. S. al-Hassani
(edt), 1001 Inventions: The Enduring
Legacy of Muslim Civiliazation (National Geographic, 3rd
Edition 2012) p: 35
৪।
George Sarton, Introduction
to History of Science, vol 3 (Baltimore: 1947)
৫।
G. A. Russell, The 'Arabick'
Interest of the Natural Philosophers in Seventeenth-Century England. (Brill
Publishers, 1994) p. 278-96,
৬। Shlomo Pines,
Studies in Arabic Versions of Greek Texts and in Mediaeval Science (Magnes Press, 1986) p: 368
৭। S. H. Nasr and M.A. Razavi, The Islamic Intellectual Tradition in Persia (Routledge, 1996)
৮। Seyyed Hossain
Nasr, Science and Civilization in Islam (ABC
International Group, Inc. 2001) p: 128; Fernando Espinoza (2005). "An Analysis of the Historical Development of Ideas
About Motion and its Implications for Teaching". Physics Education. 40 (2): 139–146.
৯। Shlomo
Pines, Studies in Arabic versions of Greek texts and in
mediaeval science. (Magnes Press, 1986) p. 203.
১০।
Abel B. Franco,
"Avempace, Projectile Motion, and Impetus Theory". Journal of the
History of Ideas. 64 (4): 543.
১১। Michael Hamilton Morgan, Lost History : The Enduring Legacy of Muslim Scientists, Thinkers and Artists (Washington D.C.: National Geographic, 2008)
p: 104
১২। প্রাগুক্ত
১৩।
John Freely. Light from the East: How the Science of
Medieval Islam Helped to Shape the Western World (I. B. Tauris, 2011) p: x
১৪।
Samar Attar op. cit. p: 1
১৬। Arun Bala, The
Dialogue of Civilizations (Palgrave Macmillan, 2006)
১৭। ট্র্যান্সমিশন রুট
খোজা-খুজি নিয়ে ভেজাল বুঝতে পড়ুন - কুম্ভিলক কোপার্নিকাস: https://armanfirman.blogspot.com/2020/03/blog-post_81.html
১৮। পড়ুন - জাগ্রতের
জীবিত সন্তান: https://bit.ly/3fOLG9x
keywords: মুসলিম বিজ্ঞানী, আইজ্যাক নিউটন, ইবনে সিনা, আল-হ্যাজেন, ইবনে তোফায়েল
0 Comments