The Deliverance from Error




আমরা অনেকেই রেনে দেকার্ত কে গণিতবিদ হিসেবে জানি। কিন্তু তার মূল পরিচয় ছিল দার্শনিক হিসেবে। জীবনে এক সময় ভেবে বসেন, তিনি যা কিছু বিশ্বাস করেন, তার সত্যতা কতটুকু? এমন কি এ পর্যন্ত চিন্তা করেন যে তিনি যে সত্যিই বাস্তব কিছু, তার প্রমাণ কই?

দেকার্ত এর বিশ্বাস গুলোকে তুলনা করা যায় এক ঝুরি আপেলের সাথে। তিনি তার প্রতিটি বিশ্বাস এর উপর সন্দেহ পোষণ করে সমস্ত আপেল ফেলে দিলেন। এম্পিরিসিযম বা ইন্দ্রিয় বুঝ এর মাধ্যমে বিশ্বাসও তার কাছে ঠুনকো লাগে। চিন্তা করতে করতে তিনি পেয়ে গেলেন, Ah-ha! তিনি বুঝে গেলেন যে সত্যিই তিনি আছেন; একটি বাস্তব বস্তু। Cogito ergo sum – আমি চিন্তা করি বলে আমি আছি। তিনি চিন্তা করতে পারেন - এই ভাবনা থেকে তিনি বিশ্বাস করলেন যে তিনি সত্যিই আছেন। অবশেষে দেখা গেল যে প্রত্যেক ফেলে দেওয়া আপেলকেই তিনি পুনরায় তুলে নিয়েছেন। অর্থাৎ সন্দেহকৃত প্রত্যেক ভাবনাকেই তিনি পুনরায় বিশ্বাস করে নিলেন, একটি পর্যবেক্ষণ এর পর।  তার এরুপ সন্দেহের ধরণকে কে পরবর্তীতে একটি নামও দেওয়া হয়ঃ Cartesian Skepticism

পশ্চিমে এককালে Algazel নামে পরিচিত আবু হামিদ আল-গাযালীর গল্পও তেমনই। তার ঘটনা অবশ্য ঘটে দেকার্ত এর কিছুটা ৫০০ বছর আগে।

তিনি নিজের ইন্ট্রো দেন এভাবে, 
আমি প্রত্যেক অন্ধকার কামরার ভিতর উঁকি মেরেছি, আমি প্রত্যেকটি সমস্যার উপর আঘাত হেনেছি, আমি প্রতিটি অন্তহীন গর্তের মধ্যে লাফ দিয়েছি, আমি সবকটি দলের বিশ্বাস পর্যবেক্ষণ করেছি। ...এর প্রতিটি আমি করেছি যেন সত্য আর মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারি 
(পৃষ্ঠাঃ ২০)

তার বইটি যদিও আত্মজীবনীমূলক, তবে আত্মজীবনী না। বইয়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের মানুষ; মূলত ৪ প্রকারের দলের সমালোচনা করেন তিনি। সাথে বলেন কিছু অসাধারণ কথা। মুসলিম ও নন-মুসলিম, পশ্চিম পূর্বের একাংশ স্কলার অকারণে তাকে মুহাম্মাদ (স) এর পর সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম বলেননি।

বিখ্যাত শাসক নিযামুলমুল্ক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত তৎকালীন শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়, নিযামিয়্যাহ মাদরাসাহ এ মাত্র ৩৩ বছর বয়সেই তিনি অধ্যক্ষ হয়ে যান, এমনই প্রতিভাধর ছিলেন তিনি। কিন্তু, হঠাৎ তার এক ধরণের ব্রেকডাউন হয়। তিনি নিজের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছিলেন। চমৎকার জীবন ও চাকরি পিছনে ফেলে ১১ বছরের জন্য সব ছেড়ে চলে গেলেন। এই সময়ে যত ধরণের চিন্তাধারা ছিল, সব কিছু নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন। প্রাপ্ত ফল বর্ণিত করেন বইটির মধ্যে। তুলে ধরেন নিজ ও নিজের ইগোটিস্টিক নাফ্‌স এর কাল্পনিক আলাপচারিতা। বইটি পঠন এক চমৎকার অভিজ্ঞতা।

উল্লেখ্যঃ দেকার্ত, হেনরি লিউইস এর মতে, আবু হামিদ আল-গাযালী থেকে বিশাল ভাবে প্রভাবিত ছিলেন। যেন তিনি হুবুহু আল-গাযালীর চিন্তাধারাই নকল করেছেন।[২]

----------------------------------------বই হতে কিছু উক্তি

মন্টোগমারি ওয়াট বলেন (paraphrased),
ইসলাম এককালে গ্রীক দর্শন এর সাথে সংগ্রামে আবদ্ধ ছিল, তখন আবু হামিদ আল-গাযালী এসে গ্রীক ভাবনা কে উড়িয়ে দেন। এখন ইসলাম পশ্চিমা চিন্তাধারার সাথে লড়ছে, আর এখন তার আবারও একটি ‘ধর্মীয় বিজ্ঞানের পুনঃজাগরণ’[১] এর প্রয়োজন পড়েছে। এই বর্তমানে সমস্যার একটা পথ বাতলে দিতে পারে আল-গাযালীর কাজগুলোর গভির পর্যালোচনা। খৃষ্টানদেরও, ইসলাম থেকে শিখার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে, আর এর জন্য আল-গাযালী এর তুলনায় উত্তম পথপ্রদর্শক পাওয়া অসম্ভাব্য। (introduction)

> শিক্ষার সর্বনিম্ন উদ্দেশ্য হল একজনকে অজ্ঞ মানুষ থেকে আলাদা করা। কাপিং গ্লাসে অবিশুদ্ধ রক্ত রাখা হয়। শিক্ষিত মানুষ ডাক্তারের কাপিং গ্লাস এর মধ্যে মধু দেখলে তাকে ঘৃণা করে না। সে বুঝতে পারে যে কাপিং গ্লাস, মধুর তেমন পরিবর্তন করে না। সাধারণ একজন মনে করে যে রক্ত অবিশুদ্ধ হয়েছে তাকে কাপিং গ্লাসে রাখার কারণে, তারা এটা বোঝে না যে অবিশুদ্ধতা রক্তের বৈশিষ্ট্য, কাপিং গ্লাসের সাথে তার কিছু না।
> তুমি ভবিষ্যতের জীবনে (আখিরাহ) বিশ্বাস কর আর, তার জন্য প্রস্ততি না নিয়ে বরং, তা বেঁচে দাও যেন এই দুনিয়া কিনতে পার, তো এটা সঠিক চিন্তাধারার অভাব! সাধারণত তো তুমি একটি জিনিসের জন্য দুটি বেচতে পর্যন্ত পর্যন্ত রাজি হও না; কিভাবে তুমি অসিম জীবনকে শুধুমাত্র কয়টি দিনের জন্য বেঁচে দিতে পার?
> জ্ঞান, যাকে ভুল প্রমাণ করা অসম্ভব না, আসলে জ্ঞান না (৩২)
> মানুষ হতে সত্য খুজো না, বরং সত্য জানো, তাহলে বুঝবে যে সত্যবাদী কারা।
> যে ভালো সাতার কাটতে জানে না, তাকে পিছলে যাবার মত পুকুর পার হতে দুরে রাখা উচিত; দার্শনিকদের যেসব বই ইমানের ব্যাঘাত ঘটায় সেসব একজন মুসলিমের পড়তে যাওয়া উচিত নয়। সাপুড়ের নিজের ছেলের সামনে সাপ ধরতে যাওয়া উচিত না, কারণ ছেলে মনে করবে ‘আমিও বাবার মত হব’ এবং নিজেকে ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিবে। তেমনই আলিমদের সাধারণ মানুষদের সামনে এমন জটিল কিছু বলতে যাওয়া উচিত না।

 =======================

ইমাম গাজ্জালির সেরা কাজ ইহয়া উলুম আল-দ্বীন (revival of religious sciences) এর প্রতি ইঙ্গিত করা হচ্ছে।
M.M. Sharif, Muslim Thoughts: It’s Origin and Achievements (Ashraf Publications, Lahore, 1951). p. 76


Post a Comment

0 Comments