বিজ্ঞানের দর্শন - আ ভেরি শর্ট রিভিউ



When all premises are true, the conclusion must be true = Deduction
When all premises are true, the conclusion might be true = Induction


ডিডাকশান খুবই রেয়ার আর এটা প্রায় কোথাও দেখবেন না, যেকোনো ফিল্ডের কথা বলছি। আর আমাদের ইন্টারেস্টে থাকা বিজ্ঞান চলে ইন্ডাকশান দ্বারা। এটা কেমন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে? ইন্ডাকশান এর একটা সাধারণ উদাহরণ দেখি চলুনঃ

Premise 1   বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ অশিক্ষিত
Premise 2   আপনি বাংলাদেশে থাকেন
Conclusion  আপনি অশিক্ষিত

হইল কিছু? খুব স্বাভাবিকভাবেই অনেকের এটা দেখে মাথা খারাপ হবে। কিন্তু, বিজ্ঞান এর উপর ভিত্তি করেই চলে। এটা কোন নেতিবাচক দিক না, বরং ইন্ট্রিনসিকালি এটাই বিজ্ঞানের নিয়ম।


বিজ্ঞানে সাধারণত যেটা হয়ঃ এমন জিনিসকে প্রেমিস ধরা হয়, যা পরীক্ষিত। এই পরীক্ষিত প্রেমিস থেকে এমন ফলাফলের ব্যাপারে ধারণা করা হয়, যা অপরীক্ষিত। যেমন Down’s syndrome নামে একটা অবস্থা আছে। যাদের DS থাকে, তাদের একটা ক্রোমোসোম বেশি থাকে, ক্রোমোসোম ২১- এর। বিজ্ঞানীরা এটা কিভাবে জানেন? তারা বিশাল সংখ্যক মানুষের উপর পরীক্ষা চালান, এরপর সিদ্ধান্তে আসেন যে প্রত্যেক DS অবস্থাপ্রাপ্ত মানুষেরই একই বৈশিষ্ট্য – ক্রোমোসোম ২১ এরই একটা ক্রোমোসোম বেশি। কিন্তু, যদিও অসম্ভাব্য – এ কথাটা বলাই যায় যে যেসব স্যাম্পল টেস্ট কতা হ্যেছে সেসব সঠিক রিপ্রজেন্টেটিভ ছিল না। এটাও বলা চলে যে, সব মানুষ টেস্ট করা হয়নি, তো এমন মানুষ থাকতেই পারে যার অন্য কোন ক্রোমোসোমের সংখ্যা বেশি। এটা হচ্ছে সমস্যা।
খবরে যদি দেখেন বলা হচ্ছে নির্দিষ্ট খাবার আমাদের ক্ষতি করে না, বিজ্ঞানীরা পরীক্ষামূলক প্রমাণ (experimental proof) পেয়েছেন, বুঝবেন যে এমনই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। নিউজ মিডিয়ার আসলে বলা উচিত ‘ভালো মানের প্রমাণ’। কেননা এসবকে কোনসময়ই পিথাগোরাসের উপপাদ্যের মত গাণিতিকভাবে প্রমাণিত করা যাবে না। সবকিছু সম্ভাবনামূলক – ইন্ডাকশান। ইন্ডাকশান এর উপর বিশ্বাসও একটা ইন্ডাকশান। তো হচ্ছে টা কি এখানে? Begging the question। ডেভিড হিউমের ভাষায় ইন্ডাকশন নিছক ‘অন্ধ বিশ্বাস’। ফ্র্যাঙ্ক রামসি বলেন ইন্ডাকশান ‘কেন ঠিক’ প্রশ্নের উত্তর খোজা চাঁদ হাতে পেতে চাওয়া টাইপের বোকা প্রচেষ্টা। বিজ্ঞান যে পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদের (Methodological Naturalism) উপর দাড়িয়ে আছে, সেটিও, কেবল অন্ধবিশ্বাস।


অথচ, আমরা সবকিছুতে বিজ্ঞান খুজতে যাই। আমরা মনে করি বিজ্ঞান সব ব্যাখ্যা করতে পারবে – বিজ্ঞানকে আমরা একরকম প্রভুর অবস্থানে বসিয়ে দিই। লিটারালি, প্রভুর অবস্থান। বিজ্ঞান আমাদের সত্য বোঝার মাপকাঠি হয়ে উঠে, যা বিজ্ঞানের ভুল প্রয়োগ।

এই বিজ্ঞানবাদ (scientism) অনেক সমস্যার সৃষ্টি করছে। এমন এক অবস্থা – বিজ্ঞানীরা যেন আগেকার সেইসব ধর্মীয় নেতা। ‘বিজ্ঞান বলে’ ম্যাজিক শব্দ দুটো ব্যবহার করে সবকিছু চালিয়ে দেওয়া যায়। আর আমাদের কানের মধ্যে ‘বিজ্ঞান’ ধ্বনি এলেই কেমন এক ভক্তির ভাব আসে। সবকিছুতে বিজ্ঞান খুজতে যাওয়ার এক বিকৃত মানসিকতা বিরাজ করে এখানে। বিজ্ঞানের বেসিস হল ইন্ডাকশান – এটা আমাদের সত্য ধরিয়ে দেয় না। ‘সম্ভাব্য সত্য’ দেয়। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ভুল তত্ত্ব ঠিক তত্ত্বের তুলনায় অধিক সঠিক ফলাফল দেয়!

১৮ শতকের শেষ দিক পর্যন্ত ‘Phlogiston Theory of Combustion’ নামক একটি তত্ত্ব ভালোভাবেই গৃহীত ছিল বিজ্ঞানমহলে। এ তত্ত্ব মতে, যখন কোন বস্তু পুড়ে, তখন তা পরিবেশে ‘ফ্লজিস্টন’ নামক একটি পদার্থ ছেড়ে দেয়। এই তত্ত্ব ব্যবহার করে পরবর্তীতে নাইট্রোজেন আবিষ্কৃত হয়। তবে এখন আধুনিক কেমিস্ট্রি থেকে জানা যায় তত্ত্বটি ভুল, ফ্লজিস্টন বলতে আসলে কিছুই নেই!

হাজার হাজার সায়েন্টিস্টদের অসংখ্য রিসার্চ মিলিয়ে কাজ চালানোর জন্য থিওরি প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘সত্য’ প্রতিষ্ঠিত হয় না। বিজ্ঞানের কোন ফ্যাক্টই চূড়ান্ত না। আমাদের প্রিয় স্টিফেন হকিং স্যারও বলেছিলেন যে বিজ্ঞানের কোন ভৌততত্ত্বকেই প্রমাণ করা যাবে না। আমরা নবম-দশম শ্রেণীতে যে বিগ ব্যাং এর কথা পড়ি, তার (কমপক্ষে) ১৭টা মডেল আছে বিজ্ঞান মহলে। আর আমাদের সরলভাবে পড়িয়ে দেওয়া হয় জিনিসটা। আমাদের অবস্থা এত খারাপ হয়েছে যে আমরা বিজ্ঞানের তথ্য-উপাত্তকেই বিজ্ঞান মনে করে বসি। বিজ্ঞানের দর্শন আমাদের পড়ানো হয় না, আমরা এসব জেনে উঠি না। আসলে আমাদের কি, অ্যাকাডেমিকালি ট্রেইন্‌ড সায়েন্টিস্টদেরও এসব শিখানো হয় না। এসব স্টাডি করেন ফিলোসফাররা। আবার বিজ্ঞানবাদের স্বপক্ষে কৌশলে প্রচারণাও চালান আমাদের দেশের সাহিত্যিক বিজ্ঞান লেখকরা।

বিজ্ঞানের কোন শাখা আমাদের শিখায় না কিভাবে আমরা জীবনযাপন করব, সফলতা কি বা কোন জ্ঞান অর্জন করা উচিত। আমরা সবাই জানি, ২ + ২ = ৪, মহাসত্য। কিন্তু এটা কেন হয়, বিজ্ঞান কি সেটা ব্যাখ্যা করতে পারে? ফিজিসিস্টরা কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও জেনারাল রিলেটিভিটি – উভয়কে সত্য ধরেন। কিন্তু ফান্ডামেন্টাল লেভেলে দুটির সংঘাত হয়। বিজ্ঞানবাদীরা, যারা দাবী করে যে বিজ্ঞান আমাদের পরম সত্য এনে দেয়, তারা একে ব্যাখ্যা করবে কিভাবে? আমাদের জীবনে বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য – যার জন্য বিজ্ঞানের প্রতি আমাদের সবারই টান আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই টান কে ব্যাবহার করে কিছু দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ বিজ্ঞানকে সঠিক অবস্থান থেকে সরিয়ে নিজ অন্ধবিশ্বাস সবার মধ্যে সঞ্চার করার ছক সাজাচ্ছে।


মানুষ আসলে কতটা ‘বিজ্ঞান প্রেমী’, তা আমাদের দেশে কি পরিমাণ সায়েন্স সংক্রান্ত বই পড়া হয় আর কি পরিমাণ সায়েন্স ফিকশন পড়া হয় তার অনুপাত দেখলেই বোঝা যায়। ১০ম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় ড. জাফর ইকবাল স্যারের ‘বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি’ থেকে একজন ভাইয়া এসেছিলেন আমাদের স্কুলে, বিজ্ঞান প্রোমোট করতে। দারুন মজার কিছু জিনিস দেখালেন তিনি। যাওয়ার আগে লটারির মাধ্যমে প্রিয্‌ম গিফট করলেন। তার প্রস্থানের পর সবাই মিলে প্রিয্‌ম জয়ী কে ঘিরে ধরল দেখার জন্য, ১০ সেকেন্ডের মাথায় সবাই ভুলে গেলো যে এতক্ষণ কি দেখানো হয়েছে, কি অনুপ্রেরণামূলক কথাবার্তা হয়েছে! আমরা পপ সায়েন্স পাগলা, ম্যাড সায়েন্টিস্ট না।

বিজ্ঞান জ্ঞান অর্জনের একটি চমৎকার পদ্ধতি, তবে একমাত্র পদ্ধতি নয়। এটা দিয়ে সবকিছু মাপতে যাওয়া সিম্পলি অজ্ঞতা। বিজ্ঞানকে মানব কল্যাণে কাজে লাগানোর সীমিত উপকরণ হিসেবে দেখতে হবে। এর পেয়ালা থেকে সবকিছু পান করা যাবে না।

আর, বিজ্ঞানের দর্শন নিয়ে শিক্ষিত হয়ে উঠতে পড়ুন অক্সফোর্ডের very short introductions সিরিজে প্রোফেসর সামির ওকাশার লেখা Philosophy of Science।




(বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলতে গেলে, ফিলোসফি অফ সায়েন্স বোঝার জন্য হোমো স্যাপিয়েন্সঃ রিটেলিং আওয়ার স্টোরি  বইটি ড. সামির ওকাশার বই থেকেও আরও অনেক ভালো! অসাধারণ এক কাজ করেছেন ডা. রাফান আহমেদ)

Post a Comment

0 Comments